বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৪ অপরাহ্ন
Logo
নোটিশ :
Wellcome to our website...

ক্যারিয়ার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং কতটা কার্যকর?

মোঃ নাছির উদ্দিন / ১৩০৯ বার
আপডেটের সময় শনিবার, ১০ জুলাই, ২০২১

মধ্যবিত্ত শিক্ষিত পরিবারের ছেলে মেয়েদের ক্ষেত্রে সাধারণত একটি পথ খোলা থাকে, সেটি হল চাকুরী। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে।অধিকাংশই পছন্দসই চাকুরী এবং বেতন পান না।

তবে বর্তমানে অনলাইনের কল্যাণে ক্যারিয়ার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং বেছে নিতে পারেন। ফ্রিল্যান্সিং হল গতানুগতিক চাকুরীর বাইরে অনলাইন ভিত্তিক নিজের ইচ্ছামত কাজ করার স্বাধীনতা।

উভয় বিষয় নিয়ে এখানে তুলনামূলক আলোচনা করা হল যাতে আপনি বুঝতে সক্ষম হন কোনটি আপনার প্রযোজ্য-চাকরি নাকি ফ্রিল্যান্সিং?

১) সময়ের স্বাধীনতা: প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরি মানে নিজের সময়ের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বসের উপর ছেড়ে দেওয়া। আর চাকুরীটা যদি হয় ঢাকা শহরে, তাহলে কনো সন্দেহ নাই যে শহরের সেই বিখ্যাত যানজট আপনার সময়ের স্বাধীনতা হরণ করবে না।সেই সকাল৯–৫টা অথবা ৮-৮টা পর্যন্ত অফিস করার পর, পরের দিন যদি ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কোন সমস্যা অথবা যানজটের কারণে নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে অফিসে প্রবেশ করতে না পারা মানেই বসের ঝাড়ির অপেক্ষা, সেই সঙ্গে মাসের বেতন থেকে নির্দিষ্ট একটা অংশ হিসাব করে কেটে নেয়া হবে।

>> যখন আপনি ফ্রিল্যান্সার : শুধু সময় অনুযায়ী বায়ারের কাজ জমা দেয়াটাই আসল কাজ। সেটি দিনে করা হচ্ছে নাকি রাতে, সেটি কারও জন্যই কোন প্রকার মানসিক চাপের বিষয় নয়। কারও কাছে জবাবদিহিতার কোন বিষয় থাকে না। অর্থাৎ আপনার সময়ের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কেবল আপনার হাতেই, আপনি কীভাবে সময়কে উপভোগ করবেন সেটা আপনার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার।

২) হতে চাই নিজের বস : চাকরি মানেই যেকোনো কাজের ভুলের কারণে বসের মুখ থেকে অপমানজনক বকাঝকা শোনা। যে কোনো চাকরিজীবীদের জন্য এধরনের পরিস্থিতির মোকাবেলা করা খুবই সাধারণ একটি বিষয়। যারা স্বাধীনচেতা প্রকৃতির লোক তারা এ ধরনের আচরণ কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেন না। ফলে অনেক ক্ষেত্রে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে।
>> যখন আপনি ফ্রিল্যান্সার : ফ্রিল্যান্সার মানেই হচ্ছে নিজেই বস। কোনো বসের বকাঝকা খাওয়ার ভয় এজগতে নাই। আপনার চাহিদা, প্রয়োজন আনুযায়ী কাজ করতে অথবা বিরতি দিতে পারেন।

৩) আবদ্ধ গৃহ ছেড়ে পৃথিবীতে ভ্রমণ:
যারা সরকারি চাকরিজীবী তাদের বিষয়টা ভিন্ন। কিন্তু বেসরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে যেমন লংটাইম ডিউটি করতে তেমনি মাথায় অনেক চাপ নিতে হয়। সেজন্য ভ্রমণ পিপাসুদের ভ্রমণের নেশাকে ভুলে যেতে হয়।মুক্ত পাখির মতো বিশ্বব্যাপী ছুটে বেড়ানোর স্বপ্ন বাদ দিয়ে চাকরির যান্ত্রিক জীবনটাকেই বেছে নিতে হয়।

>> যখন আপনি ফ্রিল্যান্সার : আপনার সাথে যদি একটা ল্যাপটপ আর মোডেম থাকে অথবা আন্য কোন ভাবে নেট সংযোগ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকে তাহলে মন চাইলেই আপনি পর্যটক হয়ে যেতে পারেন। কেননা কোন জায়গাতে বসে বায়ারের কাজ করছেন এবং জমা দিচ্ছেন, সেটি ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নয়। আর এটাই হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিংয়ের আসল মজা।

৪) দরকার বড় অংকের মাসিক আয় : চাকরিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গড় বেতন হতে পারে ৮-২০ হাজার টাকা। মধ্যবিত্ত পরিবারের অর্থনৈতিক সমস্যা লেগেই থাকে। যদি আপনি হোন পরিবারের বড় আর পরিবারে যদি ছোট ভাই – বোন থাকে, তাহলে অবশ্যই তাদের বিয়ে এবং লেখা-পড়ার খরচ বহন করতে হবে আপনাকে।বাবা-মা যদি হয় অসুস্থ্য তাহলে অর্থনৈতিক সমস্যা দুই-তিন ধাপ বেড়ে যাবে।আমি অনেককে দেখেছি এই ভাবে ঘানি টানতে টানতে বয়স পৌঁছে যায় পঁয়ত্রিশের কোঠায়, তখন তারা বিয়ের সুযোগ পায়।মূলত আমি যা বুঝাতে চাচ্ছি, সেটা হল এই অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে যৌবনের সঠিক সময় হারাতে হচ্ছে। আর কম বেতনের কারণে নিজের অনেক স্বপ্ন ভেতরেই কবর দিয়ে দিতে হয়।

>> যখন আপনি ফ্রিল্যান্সার : আমাদের দেশে একজন মাস্টার্স করা ছেলের চাকরিতে মাসিক বেতন হয় ৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। তখন এ দেশের প্রচুর ফ্রিল্যান্সার দেখা মেলে যারা ছাত্র অবস্থাতেই মাসে লাখ টাকার ওপরে অনলাইন থেকে আয় করছে।
৬) স্বপ্ন যখন প্রতিষ্ঠানের মালিক হওয়া : স্বপ্ন দেখা মানুষের সাধারণ প্রবৃত্তি, তবে সেটা বাস্তবসম্মত হওয়াটা খুবই ভাল। আপনার স্বপ্নজগতেই পারে ছোট হলেও একটা প্রতিষ্ঠানের মালিক হওয়া। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বেতনের টাকা দিয়ে সংসার চলতেই টানটান অবস্থা। তখন কীভাবে সম্ভব স্বপ্ন বাস্তবায়ন?

>> যখন আপনি ফ্রিল্যান্সার : ১–২ বছর যাওয়ার পর অনেক ফ্রিল্যান্সারদেরই কাজের চাপ বেড়ে যায়। তখন সেই কাজ করানোর জন্যই বাধ্য হয়ে কাজ করার জন্য অনেক লোক খুঁজে নিতে হয়। আর আপনি যদি অন্যদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করেন এক দিকে যেমন আপনার স্বপ্ন পূরণ হবে অন্য দিকে মানুষের কল্যাণ হবে।

৭) যানজট কমিয়ে দিচ্ছে কাজের সময় : ঢাকা শহরের দুটি বিশেষত্ব হচ্ছে আবহাওয়া দূষণ ও যানজট। প্রতিদিন অফিসে যেতে এবং আসতে যানজটের জন্য কমপক্ষে ৫–৬ ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। যানজট কেবল আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করছে না উপরন্তু আপনার স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
>> যখন আপনি ফ্রিল্যান্সার : যানজটের কুপ্রভাবের ফলে অনেকেই সমাধান হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং পেশাটাকেই এখন পছন্দ করছে।

৮) শিল্প-সাহিত্য চর্চাঃ
প্রত্যেকের মাঝে যে (নতুন নতুন) প্রতিভা লুকায়িত আছে তা পৃথিবীর নিকট নতুন এবং কেউই চেষ্টা না করে এ ক্ষমতার বিস্তার সম্বন্ধে জানতে পারেনা। আমরা অনেকে লক্ষ্য নির্ধারণ করি শিল্প-সাহিত্য চর্চাকে কেন্দ্র করে।কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এগুলো সাধনার বিষয়। অনেক সাধককে আমরা জানি যারা শেষ জীবনে সফলতার মুখ দেখেছে।এ শ্রেণির কিছু লোক আছে যাদের বিকল্প অর্থনৈতিক উৎস থাকায় ভাল আছেন।আর বাকিদের দুঃখ দুর্দশার শেষ নেই।এরা খুব স্বাধীন চেতা হওয়ার কারণে কোন চাকরি করতে পারে না।

>> যখন আপনি ফ্রিল্যান্সার: এ পেশাতে জবাবদিহিতার কোন ঝামেলা না থাকায় আপনি সহজেই আয় করতে পারেন। অভাবের কারণে অনেকের সৃজনশীল ক্ষমতা ধংস হয়ে যায়। আপনার সৃজনশীল কাজ যেমন বই, নাটক প্রকাশ করতেও টাকার প্রযোজন। আপনি চাইলে আপনার সৃজনশীলতা অনলাইনের মাধ্যমে প্রকাশ কারেও আয় করতে পারেন।
আরও অনেক কারণ দেখানো যেতে পারে কেন চাকরিজীবী না হয়ে ফ্রিল্যান্সার হবেন। তবে আমাদের সামাজিক বাস্তবতা চাকরিজীবী হওয়ার পক্ষেও অনেক যুক্তি দেখায়।

– চাকরি করতে গেলে অফিসে বিভিন্ন ধরনের লোকদের সাথে পরচয় হয় ফলে অনেক কিছু শেখা যায় তাদের কাছ থেকে। ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষেত্রে কিছু শিখতে হলে সম্পূর্ণভাবে অনলাইনের ওপর নির্ভর করতে হয়।

– চাকরিজীবীদের জীবনে সুশৃংখলার পাশাপাশি , সময়ানুবর্তিতার চর্চা থাকে। কিন্তু ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটি দেখা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে স্বাধীনতার অপব্যবহার দেখা যায়।
চাকরিজীবী হবেন নাকি ফ্রিল্যান্সার হবেন সেটি আপনার নিজের সিদ্ধান্ত। সবক্ষেত্রে ভালো–খারাপ দুদিকই রয়েছে। তবে সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এখনও এদেশে ফ্রিল্যান্সিংটাকে কেউ পেশা হিসেবে নিতে ভয় পাচ্ছেন। তবে যদি পেশা হিসাবে নিতে পারেন তবে সে ক্ষেত্রে বেশি লাভমান হওয়ার সম্ভাবনা আছে বেশি।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প যাত্রা শুরু করে ষাটের দশকে। তবে সত্তরের দশক শেষের দিকে রপ্তানিমুখী খাত হিসেবে এই শিল্পের উন্নয়ন ঘটতে থাকে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী শিল্পখাত। যারা প্রথমের দিকে পোশাক শিল্পকে ব্যাবসা এবং পেশা হিসেবে নিয়েছেন তাদের বর্তমান অবস্থান আমরা ভাল ভাবেই জানি। ইতিহাস এও বলে যে প্রথমের দিকে এটার সামাজিক সীকৃতি ছিল না।

তবে সরকার যেভাবে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টিকে গুরুত্ত্ব দিচ্ছে, তাতে খুব শিগগিরই এর পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা যায়। আর শিক্ষিত তরূণ সমাজের কাছে এ শিল্প যেভাবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, ফলে এতে কোন সন্দেহ থাকে না যে দ্রুতই কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে যেখান থেকে ফ্রিল্যান্সার নিয়োগ দেয়া হবে, এই ফ্রিল্যান্সারদেরকে অফিসে যেয়ে কাজ করতে হবে না, তারা দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে বা নিজের ঘরে বসে কাজ করতে পারবে।এটাই হল ফ্রিল্যান্সিং এর আসল সৌন্দর্য্য।

 

নতুন নতুন টিপস্ ও রেডিমেট ডকুমেন্ট ফরমেট পেতে 
আমার ফেসবুক পেজে লাইক দিন  

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: মোঃ নাছির উদ্দিন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন







Theme Created By ThemesDealer.Com
x
x