গত পর্বে সার্চ ইঞ্জিন সম্পর্কিত বিভিন্ন টেকনিক্যাল টার্ম গুলি জানার পর, এই পর্বে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন-এর প্রয়োজনীয়তা, পূর্ব পরিকল্পনা ও প্রকারভেদ নিয়ে বিস্তারিত জানব।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) কেন প্রয়োজন :
SEO হল একটি টেকনিক বা কৌশল যার সাহায্যে কোন ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনে ভালো অবস্থায় বা শীর্ষ স্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। SEO কে টেকনিক বা কৌশল বলার কারন হল, এর (SEO) তেমন কোন নির্দিষ্ট নিয়মাবলী নেই যা অবলম্বন করে 100% ফলাফল পাওয়া সম্ভব। তবে কিছু নিয়মকে গুরুত্ব দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
এখন প্রশ্ন হল কোন ওয়েবসাইটের জন্য সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO)-এর কেন প্রয়োজন ? গত সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন কোর্স – প্রথম পর্বে আমরা সার্চ ইঞ্জিন সম্পর্কে জেনেছি। এখন সার্চ ইঞ্জিন সম্পর্কে ধারনা পাওয়ার পর, মনে করুন এটি স্টোরে একাধিক মালপত্রের মধ্যে আপনার একটি প্রয়োজনীয় জিনিস নিতে হলে অনেক সময় ব্যয় করে সেটা খুজতে হবে।
ঠিক সে রকমই আমাদের কোন ওয়েবসাইট বা কোন কিছু তথ্য পেতে চাইলে সেই সম্পর্কিত ওয়েব সাইট খুজতে সাহায্য করে সার্চ ইঞ্জিন। এক্ষেত্রে আমরা ওয়েবসাইটের URL না জেনেও সেই সম্পর্কিত তথ্য সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যেমে সহজেই খুঁজে পাই। এখন ভাবুন কোন সাইটকে সার্চ ইঞ্জিনে অপটিমাইজ করা কতটা গুরুত্বপুর্ন। এবং তার থেকে বেশি গুরুত্ব পূর্ন সেই ওয়েবসাইটকে প্রথম পেজে র্যাকিং করানো, তার কারন আমরা সচরাচর সার্চ ইঞ্জিনের রেজাল্টের প্রথম ও দ্বিতীয় পেজের রেজাল্ট ছাড়া দেখিনা। সেজন্য সার্চ ইঞ্জিনে প্রথম ও দ্বিতীয় পেজেই বেশি ট্রাফিক আসে আর যেটা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের প্রধান লক্ষ্য।
কোন ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের জন্য অপটিমাইজ কারার পূর্বে একটি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। যা আমাদের সঠিক ও সফল ভাবে SEO করতে সাহায্য করবে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, একটি বাড়ি তৈরির পূর্বে যেমন সেই বাড়ি কেমন হবে তার জন্য একটি ডিজাইন বানানো হয়, তেমনি ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক করাতে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজ কারার পূর্বে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন।
সার্চ ইঞ্জিন ফ্রেন্ডলি ওয়েবসাইট : কোন ওয়েব সাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের জন্য অপটিমাইজ কারার প্রথম শর্ত হল সার্চ ইঞ্জিন ফ্রেন্ডলি ওয়েব সাইট। সার্চ ইঞ্জিন ফ্রেন্ডলি ওয়েব সাইটের মাপকাঠি বিভিন্ন ভাবে নির্নয় করা হয়। এগুলির মধ্য অন্যতম যে যে বিষয় আছে তা হল-
উদাহরণ সরূপ গুগল (Google)-এর হোমপেজের প্রায় 70% এরিয়া খালি এবং একটি বড় সার্চ ইনপুট ফর্ম ছাড়া আর তেমন কিছুই নেই, যা কোন ইউজারকে সহজেই ধারনা দেয় গুগল (Google) একটি সার্চ করার ওয়েবসাইট। এই একই সেবা Yahoo! তে থাকলেও ইন্টারফেস বা ডিজাইন ততটা ইউজারদের ফ্রেন্ডলি না হওয়ায় আজ Yahoo!-এর তুলনায় Google-এ বেশি লোক সার্চ করতে পছন্দ করে।
ওয়েবসাইটে মাল্টিমিডিয়ার কম ব্যাবহার : কোন ওয়েবসাইটে মাল্টিমিডিয়া (ছবি, মিউজিক, ভিডিও ইত্যাদি) ব্যাবহার যেমন একদিকে সেই সাইটের কন্টেন্টকে আকর্ষণীয় করে তেমনি বেশি মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার ওয়েবসাইটের খোলার স্পীড ধীর করে এবং মাল্টিমিডিয়া সার্চ ইঞ্জিন গুলির Crwlers Bot (রোবট) পড়তে পারে না, তাই ওয়েবসাইটে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহারে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনে কোন পজেটিভ প্রভাব পড়েনা।
গ্রফিক্স, ফ্ল্যাশ ও জাভাস্ক্রিপ্টের কম ব্যবহার : মাল্টিমিডিয়ার মতই গ্রফিক্স, ফ্ল্যাশ ও জাভাস্ক্রিপ্টের ব্যবহার ওয়েবসাইটে ডিজাইনকে আকর্ষণীয় করার কাজে ছাড়া কোন প্রকার সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনে সাহায্য করে না। এছাড়া অনেক ইন্টারনেট ব্রাউজারে ফ্ল্যাশ ও জাভাস্ক্রিপ্ট সাপোর্ট করে না, সেক্ষেত্রে ওই ওয়েবসাইট সম্পর্কে ইউজারদের নেগেটিভ মনে ধারনা জন্মায়।
টেক্সট ও কোডিং-এর ব্যবহার : মাল্টিমিডিয়া, গ্রফিক্স, ফ্ল্যাশ ও জাভাস্ক্রিপ্টের ব্যবহার কম করে টেক্সট ব্যবহার বেশি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনে সাহায্য করে। এছাড়াও ফ্ল্যাশ ও জাভাস্ক্রিপ্টের ব্যবহার কম করে কোডিং যেমন – HTML, CSS, PHP, XML প্রভৃতি ব্যবহার করা উচিৎ।
নিজস্ব ও অনন্য কনটেন্ট ব্যবহার : যে কোন সার্চ ইঞ্জিন নিজস্ব ও অনন্য কনটেন্টের উপর বেশী গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সার্চ ইঞ্জিন গুলির Crwlers Bot (রোবট) নিজস্ব ও অনন্য কনটেন্টের ওয়েবসাইটের Content গুলিকে সার্চ ইঞ্জিন-এর ডেটাবেসে স্টোর করে ও সার্চ রেজাল্টে প্রাধান্য দেয়।
সাইটম্যাপ : এটি কোন ওয়েবসাইটের সূচীপত্রের মত, Sitemap থেকে সার্চ ইঞ্জিন সহজেই সেই ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তু সহজেই পড়তে ও ইনডেক্স করতে পারে।
ওয়েব কপি রাইটিং : ওয়েব কপি রাইটিং হল অন্যের ওয়েবসাইটের টেক্সট, ছবি, মিউজিক, ভিডিও ইত্যাদি নকল করে নিজের সাইটে ব্যবহার করা। এটি করা যেমন আইনত অপরাধ, তেমনি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের ক্ষেত্রে একদম সমর্থন করে না।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) প্রকার :
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) মুলত দুই প্রকার, (১) অন-পেজ-এসইও (On-page-SEO) অফ-পেজ-এসইও (Off-page SEO).
অন-পেজ-এসইও (On-page-SEO) : এই এসইও মুলত ওয়েবসাইটের পেইজে করা হয়। অর্থাৎ অন-পেজ-এসইও (On-page-SEO) সাইটের কোডিং দ্বারা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত। On-page-SEO-এর মাধ্যমে কোন ওয়েবসাইটে ন্যাচারাল অরগানিক সার্চ ভিজিটর পাওয়া যায়।
অফ-পেজ-এসইও (Off-page SEO) : এই এসইও-কে বহিরাগত SEO বলা হয়। কারন এই ধরনের সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন ওয়েবসাইটের URL শেয়ার করা ছাড়া সাইটের অভ্যন্তরীন কোডিং দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়।
নীচে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO)-এর দুই প্রকার পদ্ধতির বিভিন্ন বিষয় টেবিল আকারে দেখানো হল-
অন-পেজ-এসইও (On-page-SEO) | অফ-পেজ-এসইও (Off-page SEO) |
---|---|
টাইটেল ট্যাগ | লিঙ্ক বিল্ডিং |
মেটা ডেসক্রিপশন | সোস্যাল মিডিয়া মাকেটিং |
হেডিং এবং HTML ট্যাগ | ব্লগ ও ফোরাম সাবমিশন |
অ্যাংকর ট্যাগ | ডিরেক্টরি সাবমিশন |
এএলটি অ্যাট্রিবিউট | আর্টিকেল ও ভিডিও সাবমিশন |
অন্যন্য ও ভালো মানের কন্টেন্ট | |
ইন্টারনাল লিংক | |
ULR-এর গঠন | |
সাইট সাবমিশন |
এছাড়াও অনেকে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO)-এর টেকনিক বা কৌশলের পদ্ধতি অনুযায়ী দুটি ভাগে ভাগ করে থাকেন। যথা – White hat seo techniques ও Black hat seo techniques.
পরবর্তী পর্বে অন-পেজ-এসইও (On-page-SEO) সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
** পোস্টটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন যারা শিখতে ইচ্ছুক এবং কমেন্ট করে আপনার মতামত জানান ।
নতুন নতুন টিপস্ ও রেডিমেট ডকুমেন্ট ফরমেট পেতে
আমার ফেসবুক পেজে লাইক দিন