ভূমি বিষয়ে দেওয়ানী ও ফৌজদারী বিরোধ, মামলা মোকদ্দমা, প্রতারণা, হয়রানী, জালিয়াতি ইত্যাদি লাঘব এবং ভূমি হস্তান্তরের স্বচ্ছতা আনয়ণের লক্ষ্যে সম্পত্তি বাংলাদেশ সরকার রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ সংশোধন এবং ভূমি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ সংশোধন করেছেন। রেজিস্ট্রেশন আইনের উল্লেখযোগ্য সংশোধনীসমূহ নিন্মরুপ:
১. ধর্মীয় বিধান মোতাবেক মৌখিক হেবা আইনসিদ্ধ। তবে হেবার প্রমাণ সুরক্ষা করার জন্য পরে হেবা সম্পর্কে একটি ঘোষণামূলক দলিল বা হলফনামা রেজিস্ট্রি করতে হবে। মুসলিম আইন অনুসারে স্বামী স্ত্রী, পিতামাতা ও সন্তানাদি, দাদাদাদি/ নানানানী ও নাতি কিংবা আপন ভাইবোনদের মধ্যে হেবা হলে ঘোষনামূলক দলিল হলফনামা মাত্র ১০০ টাকা ফি দিয়ে রেজিস্ট্রেশান করা হবে।
২. কোন ব্যাংক হতে ঋণ গ্রহণ করতে হলে বন্ধকী দলিল রেজিস্ট্রি করতে হবে। বন্ধক উদ্ধার (Redemption) না করে অথবা বন্ধক গ্রহীতার লিখিত সম্মতি ছাড়া ঐ জমি অন্যত্র যে কোন প্রকার হস্তান্তর বেআইনী হবে। বন্ধকী দলিলে রেজিস্ট্রশন ফি পূর্বের তুলনায় অনেক হ্রাস করা হয়েছে।
৩. ওয়ারিশসুত্রে প্রাপ্ত এজমালী সম্পত্তি বাটোয়ারা করার ক্ষেত্রে দলিল করা বাধ্যতামূলক নয়। তবে বাটোয়ারা লিখিতভাবে দলিলের মাধ্যমে সম্পাদন করলে রেজিস্ট্রি করতে হবে।
৪. বায়না চুক্তি রেজিস্ট্রি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। চুক্তি বলবৎ থাকাকালীন উক্ত একই জমি অন্যত্র যেকোন প্রকার হস্তান্তর বেআইনী হবে। পূর্বে যে সকল বায়না হয়েছে কিন্তু রেজিস্ট্রি হয়নি সেগুলি ১লা জানুয়ারী ২০০৬ তারিখের মধ্যে রেজিস্ট্রি করতে হবে অথবা মূল সাফ কবলা দলিল রেজিস্ট্রি করে নিতে হবে। অন্যথায় ঐ বায়না অকার্যকর হয়ে যাবে।
৫. সাফ কবলা দান, হেবা এবং হেবার ঘোষণাপত্র দলিল সারা দেশে একই পদ্ধতিতে লেখার সুবিধার্থে একটি সহজ ফরমেট নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত ফরমেটে ঐ সকল দলিল লেখা ১লা অক্টোবর ২০০৫ থেকে বাধ্যতামূলক।
৬. স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে উক্ত সম্পত্তির খতিয়ান দলিলদাতার নামে হতে হবে। তবে মালিকানা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হলে দাতার পুর্ব পরুষের নামে খতিয়ান থাকলেও চলবে।
৭. রেজিস্ট্রেশনের সময় দলিলে দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ের ছবি দিতে হবে।
৮. দলিল রেজিস্ট্রির সময় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গ্রহীতার উপস্থিতি বাধ্যতামূলক নয়। দলিলে গ্রহীতার দস্তখত এবং ছবি সাব-রেজিস্ট্রারের সম্মুখে দিতে হবে না। গ্রহীতার ছবি এবং দস্তখত দলিলে থাকলেই গ্রহণযোগ্য হবে।
৯. জমি রেজিস্ট্রির সময় ক্রেতা বা বিক্রেতাকে দলিল লেখক কর্তৃক সনাক্ত করতে হবে না।
১০. প্রবাসী কোন নাগরিক দেশে উপস্থিত না থাকলে প্রচলিত নিয়মে নিবন্ধিত আম-মোক্তারনামার মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করতে পারবেন।
১১. আদালত কর্তৃক ডিক্রিপ্রাপ্ত বা নিলামে ক্রয়কৃত স্থাবর সম্পত্তির জন্য ২৫ বছরের মালিকানার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস প্রয়োজন হবে না।
১২. বায়নাপত্র, ব্যাংকের অনুকূলে বন্ধক, নির্ধারিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে হেবার ঘোষণা দলিল/হলফনামা রেজিস্ট্রেশনের জন্য নগণ্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।
১৩. ওয়াকফ্ দলিল, বন্টননামা দলিল ও নাদাবি দলিলে নতুন কোন ফি ধার্য করা হয়নি।
১৪. ১ জুলাই ২০০৫ তারিখের পূর্বে সম্পাদিত বায়না চুক্তি ব্যতিত অন্য কোনো দলিলের ক্ষেত্রে সংশোধিত আইনের কোনো বিধান কার্যকর হবে না।
১৫. রেজিস্ট্রেশন আইন ৩৫ ধার মতে কোনো নাবালক দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রেশন করতে পারে না। ১৮ বৎসর পূর্ন না হলে নাবালক বলে গন্য।
১৬. দলিল সম্পাদনের ৩০ দিনের মধ্যে তা রেজিস্ট্রির জন্য রেজিস্ট্রি অফিসে দাখিল করতে হবে। রেজিস্ট্রির পর দলিলটির দাতার স্বাক্ষরের তারিখ হতেই দলিলটি সম্পাদিত হয়েছে বলে তা কার্যকর হয়।
১৭. খতিয়ান সংশোধন বা নামজারির প্রক্রিয়া সহজীকরণ, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে খতিয়ান সংশোধন বা নামজারির আবেদন নিস্পত্তি ও খতিয়ানের সইমোহরী নকল সাধারনের নিকট সহজলভ্য করতে সহকারী কমিশনার (ভূমি)/ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রতি ভূমি মন্ত্রনালয় এবং সংস্থাপন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় নির্দেশনাসহ অফিস আদেশ জারি করেছে।
সূত্র: সরকার ঘোষিত নতুন আইনের কিছু বিশেষ দিক যা পোস্টার আকারে জনগণের জ্ঞ্যাতার্থে টাঙানো হয়েছে।
নতুন নতুন টিপস্ ও রেডিমেট ডকুমেন্ট ফরমেট পেতে
আমার ফেসবুক পেজে লাইক দিন