ডিজিটাল মার্কেটিং এর অনেকগুলো প্লাটফর্ম রয়েছে। আপনার কোম্পানির ধরণ, কোম্পানির প্রোডাক্ট ও ব্যবসার পরিধি এর বিষয়টি বিবেচনা করে আপনাকে সঠিক প্লাটফর্মটি বেছে নিতে হবে। আমরা আজকের পোস্টে বর্তমান সময়ের আটটি জনপ্রিয় ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে আলোচনা করব।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে এই আটটি প্লাটফর্ম বর্তমানে সবচাইতে জনপ্রিয়। এ ছাড়া আরো অনেক ধরনের ডিজিটাল মার্কেটিং রয়েছে। তবে আজকের পোস্টে সবগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা না করে শুধুমাত্র এই আটটি ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জেনে নিব।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর সবচাইতে বড় মার্কেটপ্লেস হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং। পুরো বিশ্বের প্রায় অর্ধেকের বেশি মানুষ এখন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে। আমাদের দেশের প্রায় ৫ কোটি মানুষ শুধুমাত্র ফেসবুক সোশ্যাল মিডিয়াতে কানেকটেড রয়েছে। সেই জন্য আমাদের দেশে বর্তমানে ফেসবুক মার্কেটিং সবচাইতে জনপ্রিয়। সেই সাথে অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করলে ডিজিটাল মার্কেটিং করে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর ভীতরে আবার অনেকগুলো প্লাটফর্ম রয়েছে। যেমন- ফেসবুক মার্কেটিং, টুইটার মার্কেটিং, ইনস্ট্রাগ্রাম মার্কেটিং, লিংকডিএন মার্কেটিং, পিনটারেস্ট মার্কেটিং ও স্নাপচ্যাট মার্কেটিং ইত্যাদি সহ আরো কিছু সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং রয়েছে। মূলত এই সবগুলো প্লাটফর্ম সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে মানুষ ব্যবহার করে বিধায় মার্কেটিং ক্ষেত্রে এগুলোকে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বলা হয়।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং আবার দুই ধরনের রয়েছে। যেমন-
- ফ্রি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং।
- পেইড সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বা টাকার বিনিময়ে বিজ্ঞাপন।
ফ্রি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের সাইটে কোম্পানির নামে একটি পেজ তৈরি করে সেগুলোতে প্রোডাক্ট শেয়ার করার মাধ্যমে ফ্রি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করা হয়। সেই সাথে বিভিন্ন ধরনের গ্রুপ তৈরি করে এবং বিভিন্ন গ্রুপে জয়েন করে ফ্রি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করা যায়।
পেইড মার্কেটিং আবার দুই ধরনের রয়েছে। একটি হচ্ছে বিভিন্ন বড় বড় সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটারদের সাথে কন্টাকের মাধ্যমে মার্কেটিং করা এবং অন্যটি হচ্ছে সরাসরি সোশ্যাল মিডিয়াতে ডলার পে করার মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করা। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে ফ্রি এবং পেইড উভয় মার্কেটিং বেশ জনপ্রিয়।
২। গুগল এডওয়ার্ডস
গুগল এডওয়ার্ডস হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় একটি ডিজিটাল মার্কেটিং প্লাটফর্ম। আপনি বিভিন্ন ব্লগে এবং ওয়েবসাইটে যে সমস্ত বিজ্ঞাপন দেখতে পান সেগুলোর অধিকাংশ হচ্ছে গুগল এডওয়ার্ডস এর বিজ্ঞাপন। সাধারণত গুগল এডওয়ার্ডস এর মাধ্যমে গুগলকে টাকা পরিশোধ করে এ ধরনের বিজ্ঞাপন বা মার্কেটিং করা হয়। যেকোন কিওয়ার্ডকে টার্গেট করে বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে গুগল এডওয়ার্ডস হচ্ছে সবচাইতে জনপ্রিয়।
সাধারণত এ ধরনের ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিজ্ঞাপন ওয়েবসাইট/ব্লগের পোস্টের ভীতরে, ডানে, বামে, পোস্টের নিচে, ব্লগের হেডার ও ইউটিউব ভিডিওতে শো হয়ে থাকে। এ ধরনের মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন এর ভিউ ও ক্লিক হিসেব করে গুগলকে টাকা পরিশোধ করতে হয়।
৩। ইউটিউব মার্কেটিং
ডিজিটাল মার্কেটিং ক্ষেত্রে ইউটিউব এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ বিনোদনের জন্য মানুষ এখন টেলিভিশন এর চাইতে ইউটিউবে বেশি ভিডিও দেখে থাকে। বিশেষকরে ইউটিউবে প্রায় সকল ধরনের ভিডিও পাওয়া যায় বিধায় ইউটিউবে ভিডিও দেখতে সবাই স্বাচ্ছন্দবোধ করে। যার জন্য বিভিন্ন কোম্পানি এখন তাদের প্রোডাক্ট বিপণন ও প্রচারের জন্য ইউটিউবকে কাজে লাগাচ্ছে।
ইউটিউ মার্কেটিয়ে আবার দুই ধরনের প্রসেস রয়েছে। একটি হচ্ছে বিভিন্ন জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেলের সাথে কন্টাকের মাধ্যমে পন্যের রিভিউ ও স্পনসরড ভিডিও তৈরি করা এবং অন্যটি হচ্ছে গুগল এডওয়ার্ডস এর মাধ্যমে সরাসরি ইউটিউবে বিজ্ঞাপন দেওয়া। সাধারণত ভিডিও টাইপের বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে ইউটিউব মার্কেটিং বেশি করা হয়।
৪। কনটেন্ট রাইটিং
প্রত্যেকটি কোম্পানি এখন তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরি করতে পছন্দ করে। কারণ কোম্পানির নামে একটি ব্লগ তৈরি করে সেটিকে জনপ্রিয় করে তোলা গেলে ব্লগে কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট এর রিভিউ লিখে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সহজে প্রোডাক্ট কাস্টোমারদের কাছে পৌছানো যায়।
আপনি যখন কোন একটি ডিজিটাল প্রোডাক্ট কিনতে চান, তখন প্রোডাক্ট কেনার আগে সেটি আপনার লোকাল মার্কেটে কি পরিমান দামে পাওয়া যাবে, সেটা জেনে নেওয়ার চেষ্টা করেন। বিশেষকরে কম্পিউটার ও ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে এখন সবাই ইন্টারনেট থেকে ল্যাপটপ এর বিভিন্ন বিষয় জেনে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে আপনার ওয়েবসাইটের প্রোডাক্ট পছন্দ হলে কাস্টোমার আপনার কোম্পানির প্রোডাক্ট কেনার জন্য অবশ্যই যোগাযোগ করবে।
৫। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও)
একটি ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বা ভিজিটর বৃদ্ধি করে নেওয়ার জন্য সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) করতে হয়। ডিজিটাল মার্কেটে এসইও এক্সপার্টদের বেশ ডিমান্ড রয়েছে। কারণ কেবলমাত্র একজন এসইও এক্সপার্ট আপনার ওয়েবসাইটের প্রোডাক্টগুলো গুগল সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌছে দিতে পারবে।
আপনার ওয়েবসাইটের প্রোডাক্ট গুগল সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌছানোর জন্য অবশ্যই আপনার ওয়েবসাইটটিতে প্রোপার এসইও করতে হবে। কারণ একজন মানুষ কোন ওয়েবসাইটের এড্রেস টাইপ করে গুগলে কোন প্রোডাক্ট খোজে না।
একজন মানুষ যখন কোন প্রোডাক্ট এর প্রয়োজন মনে করে, তখন সেই প্রোডাক্ট এর নাম লিখে সরাসরি গুগলে সার্চ করে। এ ক্ষেত্রে প্রোডাক্ট এর নাম লিখে সার্চ করে আপনার প্রোডাক্ট এর লিংক গুগল সার্চ রেজাল্টের সবার উপরে পাওয়া গেলে ভিজিটর আপনার প্রোডাক্ট কেনার জন্য আগ্রহ দেখাবে। কাজেই ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) এর অনেক গুরুত্ব রয়েছে।
৬। ইমেইল মার্কেটিং
ইমেইল মার্কেটিং হচ্ছে একটি অনলাইন মার্কেটিং পদ্ধতি যার মাধ্যমে আপনার পন্যের এবং সেবার প্রচার করতে পারবেন। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছোট বড় অসংখ্য প্রতিষ্ঠান এই পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের আয় বৃদ্ধি করছে। ইমেইল মার্কেটিং হল আপনার ক্রেতাদের কাছে আপনার পণ্যের তথ্য পৌছানোর সবচাইতে কার্যকরী পদ্ধতি।
ইমেইল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে আপনাকে ভিন্ন ভিন্ন বয়সের কিংবা বিভিন্ন ক্যাটাগরির মানুষের মেইল এড্রেস কালেক্ট করতে হবে। তারপর যে পণ্যের মার্কেটিং করতে চান, সেটি নিয়ে ভালভাবে গবেষণা করার পর পন্যের চাহিদার বিষয় বিবেচনা করে বিভিন্ন মেইল এড্রেসে আপনার পণ্যের লিংক পাঠিয়ে দিতে হবে। তারপর সেই ব্যক্তি আপনার প্রোডাক্ট দেখে পছন্দ করলে প্রোডাক্ট ক্রয় করার জন্য আগ্রহ প্রাকাশ করতে পারে। মূলত এভাবে ইমেইল মার্কেটিং করা হয়ে থাকে।
৭। এফিলিয়েট মার্কেটিং
কোন কোম্পানির প্রোডাক্ট বিক্রি করে কমিশন নেওয়াকে আমরা সাধারণত এফিলিয়েট মার্কেটিং বলে থাকি। এফিলিয়েট মার্কেটিং করে আপনি আপনার কোম্পানির প্রোডাক্ট অনলাইনে বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারা বিক্রি করে নিতে পারেন। এখানে আপনি এফিলিয়েট কমিশন ভোগি হবেন না, আপনি এফিলিয়েট প্রোগ্রাম চালু করে অন্যকে কমিশন দেবেন। বর্তমানে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটে প্রচুর পন্য ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে।
৮। মোবাইল এপস মার্কেটিং
বর্তমান সময় টেকনোলজির যুগ হওয়ার কারনে প্রায় সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন রয়েছে। আর প্রত্যেকটি স্মার্টফোনে মানুষ বিভিন্ন ধরনের মোবাইল এপস ব্যবহার করছে। বিশেষকরে গুগল প্লে-স্টোর ও এ্যাপল এপস স্টোরে সহজে বিভিন্ন এপস পাওয়া যায় বিধায় সবাই এখন মোবাইলে তাদের পছন্দের এপস ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে।
আর ডিজিটাল মার্কেটাররা সেই সুযোগকে ব্যবসার কাজে ব্যবহার করে তাদের পন্য প্রমোট করে নিচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের এপস তৈরি করে সেগুলোতে প্রোডাক্ট এর বিজ্ঞাপন দিয়ে সহজে পন্যের প্রচার ঘটানো যায়। তাছাড়া গুগল এডমুব এর মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করে সব ধরনের মোবাইলের এপস এর ভীতরে বিজ্ঞাপন দেওয়া যায়।
ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার
বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক ডিজিটাল মার্কেটার রয়েছে যারা ডিজিটাল মার্কেটিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহন করে মাসে হাজার হাজার টাকা আয় করছে। আপনি যদি একজন ডিজিটাল মার্কেটার হতে চান, তাহলে উপরের যেকোন ৪/৫ টি মার্কেটিং সম্পর্কে নিজেকে ভালোভাবে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারেন। তাহলে আপনি ভবিষ্যতে একজন ভালোমানের ডিজিটাল মার্কেটার হয়ে বিভিন্ন কোম্পানির মার্কেটিং সেক্টরে একটি সম্মানজনক জব করতে পারবেন।
আপনি হয়ত জানেন না যে, বর্তমানে প্রায় সকল ধরনের বড় বড় কোম্পানি তাদের কোম্পানির জন্য অনেক টাকা ব্যয় করে ভালোমানের ডিজিটাল মার্কেটারদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। বিশেষকরে আপনি ফেসবুক মার্কেটিং, গুগল এডওয়ার্ড, ইউটিউব মার্কেটিং ও কনটেন্ট মার্কেটিং বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারলে, ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে ক্যারিয়ার গঠন করা আপনার জন্য কোন ব্যাপার হবে না।
ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার উপায় কি?
আমাদের দেশে ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স করার ব্যবস্থা রয়েছে। আপনি চাইলে সরকারী প্রতিষ্ঠানে আবেদন করে ভর্তি হয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে নিতে পারেন। তবে সরকারী প্রতিষ্ঠানে শিখতে হলে কিছু বেশী সময় প্রয়োজন হবে।
আপনি যদি অল্প সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে চান, তাহলে ভালোমানের কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে ৩/৬ মাসের একটি ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স করে নিতে পারেন। মনোযোগ সহকারে ৩/৪ মাস প্রেকটিস করলে আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং এর মোটামুটি ধারনা অর্জন করতে পারবেন। পরবর্তীতে নিয়মিত কাজ করলে ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ অভীজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হবেন।
শেষ কথা
ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে শিখবেন সে বিষয়ে আমারা আপনাকে বেসিক ধারনা দিতে পেরেছি। আপনি যদি অন্যর প্রোডাক্ট এর প্রচার প্রচারনা করতে চান, তাহলে ট্রাডিশনাল মার্কেটিং তুলনায় সহজে ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনার টারগেটেড কাস্টমারদের কাছে নির্ধারিত পন্য বা সেবার প্রচার প্রচারনা করতে পারেন।
বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এর অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে এবং ভবিষ্যতে ডিজিটাল মার্কেটিং এর জনপ্রিয়তা আরো কয়েকগুন বৃদ্ধি পাবে। কজেই আপনার প্রোডাক্ট প্রমোট করার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং এর হেল্প নিতে পারেন। সেই সাথে আপনি একজন ডিজিটাল মার্কেটার হতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর নিয়মগুলো ভালোভাবে আয়ত্ম করে নিতে হবে।