শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২০ পূর্বাহ্ন
Logo
নোটিশ :
Wellcome to our website...

ভূমি রেজিস্ট্রেশন কেন ও কিভাবে ?

মোঃ নাছির উদ্দিন / ১২৪৬ বার
আপডেটের সময় সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

সামান্য অসর্তকতার কারণে আপনার কেনা মহামূল্যবান সম্পত্তিতে গলদ দেখা দিতে পারে। তাই জমি কেনার আগেই সবকিছু যাচাই-বাছাই করতে হবে। সামান্য ভুলের জন্য আপনাকে অনেক বেশি মাশুল দিতে হবে। তাই জমি কেনার সময় সঠিকভাবে রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে জেনে নিন ভূমি রেজিস্ট্রেশন কেন ও কিভাবে করতে হবে:

জমি বা সম্পত্তি নিবন্ধন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তার জন্য জানা দরকার জমি রেজিস্ট্রেশন আইন। ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে  ১৯০৮ সালের জমি রেজিস্ট্রেশন আইনের কিছু সংশোধনী আনা হয়,  যা ১ জুলাই ২০০৫ সাল থেকে কার্যকর হয়। উক্ত সংশোধনীর উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো-

১। আগে জমি বিক্রির কাজটি ছিল একপক্ষীয় অর্থাৎ শুধু বিক্রেতাই দলিল সম্পাদনের কাজ করতেন। এখন বিক্রেতার পাশাপাশি ক্রেতাকেও সম্পাদনের কাজ করতে হবে। এর অর্থ হচ্ছে দলিল করার সময় উভয়পক্ষকে উপস্থিত থাকতে হবে। ফলে এখন আর বিদেশে বসে কিংবা অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক ছেলে-মেয়ের নামে জমি কেনা সম্ভব না।

২। সম্পত্তিটিতে বিক্রেতার উপযুক্ত মালিকানা রয়েছে কিনা, তা প্রমাণের জন্য সম্পত্তিটির পূর্ববর্তী বিক্রেতা বা মালিকের কাগজপত্রের প্রমাণপত্র থাকতে হবে। এছাড়া সম্পত্তিতে যে বিক্রেতার আইনানুগ মালিকানা আছে এই মর্মে একটি হলফনামা জমি রেজিস্ট্রেশনের সময় জমির বিক্রেতাকে দাখিল করতে হবে।

৩। সম্পত্তির ধরণ,সম্পত্তির দাম,সম্পত্তির মানচিত্র এবং আশপাশের সম্পত্তির বিবরণ ও আঁকানো ছবি দিয়ে দেওয়া বাধ্যতামূলক।

৪। শেষ ২৫ বছর উক্ত সম্পত্তিটিতে কার কার মালিকানায় ছিল তার বিবরণ রেজিস্ট্রেশনের সময় দাখিল করা বাধ্যতামূলক।

৫। ক্রেতা ও বিক্রেতার ছবির উপরে দুপক্ষেরই স্বাক্ষর এবং টিপসই দেওয়া বাধ্যতামূলক। এর ফলে বেনামীতে আর কোনো সম্পত্তি কেনা-বেচা করা যাবে না।

৬। কোন ব্যক্তি যদি অন্য কোন ব্যক্তির নিকট হতে জমি ক্রয় করবে, এ মর্মে বায়নাপত্র করে থাকে , তাহলে সেই বায়নাপত্রটিও এখন থেকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এক্ষেত্রে নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন ফি হবে ৫০০ টাকা।

৭। জমির মূল্য ৫ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকার মধ্যে হলে রেজিস্টেশন ফি হবে ১ হাজার টাকা।

৮। জমির মূল্য যদি ৫০ লাখ টাকার বেশি হয়, তাহলে রেজিস্ট্রেশন ফি হবে ২ হাজার টাকা।

৯। যদি শরিয়া আইন অনুসারে স্বামী স্ত্রী,ভাই-বোন বা ছেলে মেয়েদেরকে কোন সম্পত্তি দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে সম্পত্তির মূল্য যাই হোক না কেন নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন ফি হবে ১০০ টাকা।

১০। চলতি সংশোধনী আইন কার্যকর হওয়ার পূর্বে সম্পত্তি কেনার চুক্তি সম্পাদনের ৩ বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকত। কিন্তু বর্তমানে তা ১ বছর সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে উল্লেখ্য যে, উভয় পক্ষ যদি চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় চুক্তিতে উল্লেখ করেন, তাহলে সেটিই কার্যকর হবে। অন্যথায় না থাকলে ১ বছর পর্যন্ত মেয়াদ থাকবে।

তবে উল্লেখ্য যে সমস্ত সম্পত্তি বিক্রির বায়না চুক্তি এখন পর্যন্ত নিবন্ধন করা হয় নি, সেই ক্ষেত্রে এই আইন বলবৎ হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য বিক্রির সব প্রমাণ উপস্থিত করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় নির্ধারিত সময়ের পর সেই সম্পত্তির বিক্রয় চুক্তি বাতিল বলে গণ্য হবে।

যদি কোনো সম্পত্তি কোনো ব্যক্তির নিকট বন্ধক থাকে, তাহলে যার কাছে জমিটি বন্ধক আছে তার লিখিত সম্মতি ছাড়া অন্য কোথাও বন্ধক রাখা বা বিক্রয় করা যাবে না। বিক্রি করলে তা বাতিল বলে বিবেচিত হবে।

 

অন্যান্য আইনকানুনঃ

  • ভূমি হস্তান্তরের দলিল স্ট্যাম্পের উপর সরকার কর্তৃক প্রকাশিত নির্দিষ্ট ফরমেট বা ছক অনুযায়ী তৈরি করতে হবে। এই ছকে ক্রেতা-বিক্রেতার ছবি সংযোজনের নতুন বিধান রাখা হয়েছে।

তামাদি হওয়ার সময়সীমা

  • তামাদি হওয়ার সময়সীমা তিন বছর থেকে এক বছর করা হয়েছে। দলিল তৈরি হওয়ার তিন মাসের মধ্যে তা রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

দলিল রেজিস্ট্রেশনের সময়

  • দলিল তৈরি হওয়ার তিন মাসের মধ্যে তা রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
  • মুসলিম পারিবারিক ধর্মীয় আইন অনুযায়ী স্থাবর সম্পত্তি মৌখিক দান বা হেবা দলিলও এখন থেকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এই দলিল হবে ঘোষণামূলক। এর জন্য ফি হবে মাত্র ১০০ টাকা।

হেবা বা দান কে কাকে করতে পারে:-

  • হেবার ক্ষেত্রে শুধু রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয় তথা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে,পিতা-মাতা ও সন্তানের মধ্যে,ভাই-ভাই,বোন-বোন অথবা ভাই-বোন,দাদা-দাদী, নানা-নানী থেকে নাতি-নাতনী ও নাতি-নাতনী থেকে নানা-নানী সম্পর্কের মধ্যে হেবা দলিলে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। এ ক্ষেত্রে নামমাত্র ১০০ (একশত) টাকায় রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পাওয়া যাবে।

উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন:-

  • উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। তবে এক্ষেত্রে ওয়ারিশগণের মধ্যে সম্পত্তি বন্টন না হওয়া পর্যন্ত রেজিস্টেশন করার প্রয়োজন নেই।

সম্পত্তি বন্ধকের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন:-

  • সম্পত্তি বন্ধকের ক্ষেত্রেও রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফি হবে ২০০ (দুইশত) টাকা থেকে ৫০০০(পাঁচ হাজার) টাকা। আগে যা ছিল ৫০০(পাঁচশত) টাকা থেকে ৫০,০০০(পঞ্চাশ হাজার) টাকা। এর ফলে বন্ধকি সম্পত্তি কেউ অন্যত্র বিক্রয় করে প্রতারণা বা জালিয়াতির আর কোনো সুযোগ পাবে না।

 

আদালতের মাধ্যমে প্রাপ্ত অগ্রক্রয় সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন:-

  • আদালতের মাধ্যমে প্রাপ্ত অগ্রক্রয় দলিলও রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

বায়না চুক্তির রেজিস্ট্রেশন ও ফি:-

 

এখন থেকে বায়না চুক্তি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সম্পত্তি বিক্রয়ের জন্য বায়নার ক্ষেত্রে ৫(পাঁচ) লাখ টাকা পর্যন্ত সম্পত্তির ক্ষেত্রে ৫০০/-(পাঁচশত) টাকা,

৫ লাখ টাকার অধিক থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ১,০০০/-(এক হাজার) টাকা,

৫০ লাখ টাকার অধিকমূল্য সম্পত্তির জন্য ২,০০০/-(দুই হাজার) টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে হবে।

 

বায়না নামা রেজিস্ট্রেশন করা ছাড়া চুক্তি বলবৎ করতে আইনগত কোন সুবিধা পাওয়া যাবে না। আবার বায়নার অবশিষ্ট টাকা জমা না করা হলে কোন মামলা মোকদ্দমা করা যাবে না। সম্পত্তি বিক্রয়ের বায়নানামা চুক্তির ৩০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

তবে বায়নানামা রেজিস্ট্রেশন না করা চুক্তি কার্যকর বা বাতিল করতে হলে রেজিস্ট্রেশনের জন্য নির্দিষ্ট মেয়াদের পর ৬ মাসের মধ্যে মামলা করতে হবে। সম্পত্তি হস্তান্তরের দলিল ৩ মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

বিঃ দ্রঃ ভবিষ্যতে মামলা মোকদ্দমা থেকে পরিবারগুলোকে রক্ষা করতে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির দলিল রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পূর্ব পুরুষদের আপসে সম্পত্তি বন্টনের দলিল রেজিস্ট্রেশন বার্ধতামূলক করার ফলে ওয়ারিশদের ভোগান্তি অনেকাংশে হ্রাস পাবে। মাত্র ২০-(বিশ) টাকা মূল্যের স্ট্রাম্পে দলিল করে তা রেজিস্ট্রেশন করা যাবে এবং সর্বোচ্চ অংশ প্রাপ্ত অংশীদারের সম্পত্তির হিসাব থেকে বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণের অংশীদারদের ভাগে পাওয়া সম্পত্তির মূল্য মানের শতকরা আড়াই ভাগ টাকা সব অংশীদারের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ নেওয়া হবে।

 

• কবলা বন্ধকী দলিল রেজিস্ট্রি ফি

ক. স্ট্যাম্প শুল্ক ক্রয়মূল্যের…………………………………………………………………………৫%
খ. রেজিস্ট্রি ফি ১-২৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয়মূল্যের জন্য টাকা…………………………………….৫০/-
গ. রেজিস্ট্রি ফি ২৫০১-৪০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয়মূল্যের জন্য ……………………………………..২%
ঘ. রেজিস্ট্রি ফি ৪০০১ হতে তদুর্ধ্ব বিক্রয়মূল্যের জন্য………………………………………………২.৫০%

ঙ.হলফনামা ফি টাকা………………………………………………………………………………৫০/-

চ. পৌরকর: সিটি কর্পোরেশন/পৌর/টাউন/ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকার জন্য………………………..১%
ছ. উৎস কর: সিটি কর্পোরেশন/পৌর/টাউন/ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকার জন্য……………………….৫%
জ. সিটি কর্পোরেশন/পৌর/টাউন/ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকা বর্হিভূত জমি বিক্রির
ক্ষেত্রে জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ কর (১%+১%)………………………………………….২%
ঝ. সিটি কর্পোরেশন/পৌর/টাউন/ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বর্হিভূত এলাকার ১ লাখ
টাকার অধিক মূল্যের অকৃষি জমি বিক্রির ক্ষেত্রে বিক্রেতার উৎস কর……………………………….৫%
ঞ. মওকুফ: সিটি কর্পোরেশন/পৌর/টাউন/ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকার বাইরের ১ লাখ টাকার নিচে অকৃষি জমি ও অন্যান্য কৃষি/ভিটি/নামা ইত্যাদি) জমি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে পৌর কর ও উৎস কর দিতে হবে না। কিন্তু জমি বিক্রির মূল্য ১ লাখ টাকার বেশি হলে, জমিটি অকৃষি হলে সে জমি পৌর এলাকার বাইরে হলেও তার জন্য ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে……………………………………………………………….৫%

রেজিস্ট্রেশন করার জন্য কিছু তথ্যের প্রয়োজন হয়। জমি রেজিস্ট্রি করতে বিক্রীত জমির পূর্ণ বিবরণ উল্লেখ থাকতে হবে। দলিলে দাতা-গ্রহীতার পিতা-মাতার নাম, পূর্ণ ঠিকানা এবং সাম্প্রতিক ছবি সংযুক্ত করতে হবে। যিনি জমি বিক্রি করবেন তার নামে অবশ্যই নামজারি (মিউটেশন) থাকতে হবে (উত্তরাধিকার ছাড়া)। বিগত ২৫ বছরের মালিকানা সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও সম্পত্তি প্রাপ্তির ধারাবাহিক ইতিহাস লেখা থাকতে হবে। সম্পত্তির প্রকৃত মূল্য, সম্পত্তির চারদিকের সীমানা,নকশা দলিলে থাকতে হবে। দাতা কর্তৃক বিক্রীত সম্পত্তি অন্য কারো কাছে বিক্রি করেননি মর্মে হলফনামা থাকতে হবে। জমির পর্চাগুলোতে (সিএস,এসএ,আরএস) মালিকানার ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। বায়া দলিল (প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে) থাকতে হবে।

নতুন নতুন টিপস্ ও রেডিমেট ডকুমেন্ট ফরমেট পেতে 
আমার ফেসবুক পেজে লাইক দিন  

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: মোঃ নাছির উদ্দিন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন







Theme Created By ThemesDealer.Com
x
x